Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভৌগলিক পরিচিতি

হাতিয়া উপজেলার পটভুমি ঃ-আয়তন ও জন সংখ্যার দিক থেকে হাতিয়া উপজেলা নোয়াখালী জেলার একটি বৃহত্তম উপজেলা। জানা যায় হাতিয়ার প্রাচীন দ্বীপ ছিল সাগর দ্বীপ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পরিপুর্ণ  এ দ্বীপটি সুবিশাল জলরাশি ভেদ করে ক্রমান্বয়ে উর্বর ও প্রায় সমতল এ দ্বীপ  সৃষ্টির অমোষ  রহস্যের  আলোয়ে গড়ে উঠে।  ১৫০ খৃষ্টাব্দে প্রখ্যাত গ্রীক জ্যোতিবিদ টলেমির বিবরণ (৩০০০ বছরের নোয়াখালী ) এবং ডঃ আবদুল করিম বিরচিত বাংলার ইতিহাস গ্রšে’র বরাত সূত্রে জুগীদিয়া সোনাদিয়া, ট্রগিদিয়া, গোয়াকুলা, বামনী, তেরকাটিয়া স›দ্বীপ, হাতিয়া, ভুলূয়া প্রভৃতি দ্বীপের কথা উল্লেখ আছে। দ্বীপগুলো তখনও  জনবসতিপুর্ণ ছিল। এ অর্থ হ”েছ ১৫০ খৃষ্টাব্দেও হাতিয়া একটি সমৃদ্ধ জনপথ হিসাবে পরিচিত ছিল। এ থেকে অনুমান করা হয় হাতিয়ার  বর্তমান বয়স ৩০০০ বছর।  এ বি ছিদ্দিক শ্বাসত স›দ্ব^ীপ গ্রšে’ ও হাতিয়ার বয়স ৩০০০ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। (১৬৬৬-১৭৬৫খৃঃ) মোঘল আমলে প্রশাসন কর্তৃক নিয়োজিত ফৌজদার নামক একজন কর্মকর্তা হাতিয়ার (স›দ্বীপ) পরগোনার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ফৌজদারী ও তার অধিক্ষেত্র এলাকার আইন শৃংখলা রক্ষা  এবং দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচার ব্যব¯’া প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। কানুনগো পদ মর্যাদার ওদাদার নামক একজন কর্মকর্তা রাজস্ব সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতেন। ১৭৬৫ খৃষ্টাব্দ বৃটিশ সরকার ফৌজদার পদ বিলুপ্ত করে এবং হাতিয়াকে চৌকি মর্যাদায় উন্নীত করে একজন দারোগার উপর হাতিয়ার বিচার ও প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পন করে। কিš‘ বিভিন্ন  কারণে দারোগাদের কার্যক্রমে জটিলতা ও অসন্তোষ দেখা দিলে সরকার পুনরায়  প্রশাসনিক ক্ষমতা ও পদ পুর্নবিন্যাসের মাধ্যমে নায়েব-ওয়াদাদাদের উপর প্রশাসনিক ও বিচার কার্য সম্পর্কিত  বিষয়ের মূল দায়িত্ব অর্পন করেন।  ১৮৮৯ খৃঃ ফৌজদারী কার্যবিধি প্রচলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এরূপ বিধান প্রচলিত ছিল। ১৭৭০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত হাতিয়া ঢাকার প্রদেশিক পরিষদ তথা ঢাকা বিভাগের  আওতাধীন চট্রগ্রাম জেলার অধীনে সন্বীপ পরগোনার অন্তর্ভূৃক্ত ছিল। ১৭৮১ খৃষ্টাব্দ হাতিয়াকে চট্টগ্রাম কালেক্টটর আওতাভূক্ত করা হয়। ১৭৭২-১৭৮২ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত হাতিয়ার শাসন ও বিচার ব্যব¯’া দেওয়ানী ও ফৌজদারী দুই পদ্ধতিতে পরিচালিত হতো । ১৮২১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত হাতিয়া  চট্রগ্রাম জেলার থেকে যায়। ১৮২১ খৃষ্টাব্দ মেঘনা নদী পশ্চিমাংশ শাহবাজপুুর (বর্তমানে ভোলা) এবং বর্তমানে বৃহত্তর নোয়াখালী এলাকা সমূহকে নিয়ে ভূলূয়া নামে পৃথক  একটি জেলার সৃষ্টি করা হয়। হাতিয়া তখন ভুলুয়া তথা নোয়াখালী জেলার অধীনে ছিল। ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দ ভুলুয়া জেলার নাম পরিবর্তন করে নোয়াখালী রাখা হয়। ১৮৭৭ খৃষ্টাব্দ সালে নোয়াখালী জেলায় জেলা জজ পদের সৃষ্টি করা হলে জেলা জজের অধীভূক্ত হাতিয়ার দেওয়ানী বিচার সমূহ নোয়াখালীতে নিষ্পত্তি করার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়। এরপর ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দ সালে সাব-ডেপুটি কালেক্টর এর মর্যাদা ও তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের ক্ষমতা সম্পন্ন একজন ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রশাসনিক প্রধান করে হাতিয়ার শাসন ব্যব¯’া পরিচালনা করার জন্য নিযুক্ত করা হলেও ১৯০৫ খৃষ্টাব্দ সালের পূর্বে তা পুর্ণাংগ ভাবে চালূ করা হয়নি। তিনি একাধারে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচার সম্পাদন করতেন। ১৯১৪ খৃষ্টাব্দ সালে হাতিয়ায় সর্বপ্রথম সার্কেল প্রথার প্রবর্তন করা হয়। এ সময় হাতিয়াকে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন থানা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯২৮ খৃষ্টাব্দ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট, ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দ হতে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটকে হাতিয়ার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে নিযুক্তির রেওয়াজ চালু হয়। ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দ হতে উপজেলা পরিষদ গঠনের পূর্ব পর্যন্ত এ অব¯’া বহাল ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮২ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত ফৌজদারী বিচার, উপজেলা প্রশাসন এবং সরকারের শাসন কার্য একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচালনা করতেন।  ১৯৮২ খৃষ্টাব্দ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নামক পদে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট এর ক্ষমতা সম্পন্ন কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করে পূর্বতন থানা প্রশাসন ব্যব¯’ার আমূল পরিবর্তন আনা হয়। উপজেলা পরিষদ গঠনের পর উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলার সার্বিক কর্তৃত্বের এবং নির্বাহী অফিসার নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হন।

২.        নামকরণ ঃ-  হাতিয়ার নামকরণ সম্পর্কে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। প্রবাদগুলো যেমন মজার তেমন আকর্ষণীয়। ইতিহাস ও বাস্তবতার সমৃদ্ধ উপ্যাখানগুলো সংশ্লিষ্ট প্রবক্তকরা গ্রহণযোগ্য করার প্রয়াসে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাও সংযুক্ত করেছেন। হাতিয়ার নামকরণ প্রবাদের দুটি প্রধান ধারা লক্ষণীয়। তন্মধ্যে একটি হাতিয়া অন্যটি হাতি প্রবাদ নামে খ্যাত। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ  হাফেজ মাওলানা এ কে মোমাজাদ আহমদ তার আমার দেখা হাতিয়া প্রবন্ধে উল্লেখ করেন- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনের সময় এক ইংরেজ আলোচ্য দ্বীপে উঠে এ এলাকার নাম কি জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে এলাকার লোকজন বলে হাটিয়া। এরপর থেকে ইংরেজ দ্বারা হাটিয়া নামজারী হয়ে গেল। যা পরবর্তীতে বাংলা উ”চারণের সুবিধার্থে হয়ে গেল হাতিয়া। মৌলভী জামাল উদ্দিন বলে ফরাসীরা বাণিজ্য করতে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন। তারা নদীপথে এ অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করত। হাতিয়া তখন মাত্র দুটি দ্বীপ। সাগরদি ও নিলক্ষী। দূর থেকে তা দেখতে তলোয়ার বা হাতিয়ার এর মতো মনে হতো।  এ হাতিয়ার বা তলোয়ার থেকে হাতিয়া নামের উৎপত্তি। এডভোকেট শরিফ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন- স›দ্বীপের দিলাল রাজার একটি হাতি ছিল। হাতিটি হাতিয়া ভূ-খন্ডের পাশে একটি কর্দমাক্ত খালে আটকা পড়ে মারা যায়। পরবর্তীতে এ ভূ-খন্ডের নাম হয়- “হাতি”-পা -আ থেকে হাতিয়া”। দ্বীপের বিখ্যাত কবি আবদুর রশিদ তার পিতার লিখিত পুঁথির আলোকে বলেন- একদা এ অঞ্চলে বড় ধরণের জলো”ছাসে কোথা থেকে একটি হাতি ভেসে আসে এবং দ্বীপের খালে আটকা পড়ে মৃত্যু ঘটে বিধায় এ দ্বীপের নাম হয় হাতিয়া। দ্বীপের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি দ্বীপের নামকরণ সম্পর্কে বলেন- একদা এ দ্বীপে জলদস্যুদের দৌরাত্ব ও অত্যাচার ছিল। জলদস্যুদের অত্যাচারের খবর তৎকালীন বাংলার শাসক শেরশাহ্ এর নিকট পৌঁছলে তিনি দস্যুদের দমনের জন্য হাতিয়াল খা নামক সেনাপতির নেতৃত্বে একদন সৈন্য প্রেরণ করেন এবং অত্যন্ত সুনামের সহিত দস্যুদের দমন করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। ঐ সেনাপতির নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরণ করা হয় “হাতিয়াল দ্বীপ”। কালক্রমে হাতিয়াল থেকে ‘ল’ উঠে গিয়ে এর নাম হয় হাতিয়া দ্বীপ। উপরোক্ত হাতিয়া দ্বীপের নামকরণ ইতিহাস আলোচনা কালে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়, হাতিয়া দ্বীপের নামকরণে হাতি নামটি অনেক আলোচনায় এসেছে। তাই দ্বীপের নামকরণ সম্পর্কিত উপরোক্ত কাহিনী  ও তথ্য কতটুকু সত্য এবং ইতিহাস নির্ভর তা ঐতিহাসিককের অনুসদ্ধান ও সঠিক গবেষণার বিষয়।

১.         ভৌগলিক অব¯’ান ঃ-২২ "৩র্০ এবং ২২"  ৬র্০ অক্ষরেখাঃ ৯১"  ০র্০ এবং ৯১"  ২র্০ উত্তর নিরক্ষরেখা এর মধ্যে অব¯ি’ত।       

২. সীমানা ঃ-উত্তরে সুবর্ণচর উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর,  পূর্বে স›দ্বীপ এবং পশ্চিমে ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলা।

৩.        উলে−খযোগ্য ¯’ান বা ¯’াপনাঃ- নিঝুমদ্বীপ, কাজির বাজার, হাতিয়া দ্বীপ সরকারী কলেজ, উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও দ্বীপ উন্নয়ন সং¯’া ভবন।